বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য | ssc বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য

কর্মজীবন থেকে শুরু করে স্কুল জীবন সব জায়গাতেই বিদায় থাকে। আর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কম বেশী সব বিদায় অনুষ্ঠানেই দিতে হয়। আজকের আর্টিকেলে কিভাবে বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দিতে হয়? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য

এই আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়লে, বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য নিয়ে আর কোন ভীতি কাজ করবে না। ওহ আরেকটা কথা SSC বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য এর একটি ডেমো স্ক্রিপ্টও লেখার শেষে দিয়ে দিয়েছি। আশা করি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

কিভাবে বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দিতে হয়?

প্রধানত বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেওয়ার কয়েকটা ধাপ রয়েছে। আমরা নিচে সেই ধাপ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ধাপ ১ঃ শুভেচ্ছা বক্তব্য

প্রত্যেক বক্তব্যের শুরুতেই একটা শুভেচ্ছা বক্তব্য দেওয়া প্রয়োজন। এটা বক্তব্যকে  সুন্দর ও মার্জিত করে তুলে। তাই বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্যে একটা শুভেচ্ছা পর্ব থাকা খুবই জরুরী। এখন আসি শুভেচ্ছা বক্তব্যে কি কি বলা দরকার এবং বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন? সর্বপ্রথমে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান মেহমান, সভাপতি ও সকল শিক্ষক, অভিভাবক, সহপাঠী, উপস্থিত সকল অগ্রজদের সালাম ও ধন্যবাদ দিয়ে শুরু করতে হবে।

এছাড়াও যিনি আপনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে তাকেও ধন্যবাদ জানাতে হবে। এরপর একটা বিদায় কবিতা বা ছন্দ বলে মূল বক্তব্য শুরু করতে হবে, যাতে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।

ধাপ ২ঃ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে

শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষ হলে পরের ধাপে  প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা বলবেন। প্রতিষ্ঠানে আপনার কাটানো সকল স্মৃতির কথা তুলে ধরবেন। এই প্রতিষ্ঠানে এসে আপনি কি কি শিখতে পারলেন অথবা নতুন যা আপনি শিখেছেন সব বিষয়ই তুলে ধরবেন। 

এছাড়াও অবিভাবকদের উদ্দেশ্য করে বলবেন, কেন এই প্রতিষ্ঠান আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত। আপনার অধ্যায়নত প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাহিরে কি কি শেখানো হয় সব কিছুই তুলে ধরবেন।

ধাপ ৩ঃ শিক্ষকদের সম্পর্কে

আপনি এই ধাপে শিক্ষকদের সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবেন। যেমনঃ তারা কিভাবে ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা দিয়েছে?

কিভাবে পাঠদান করিয়েছেন?

সব কিছুই আপনার বক্তব্যে তুলে ধরবেন। শিক্ষকরা সবার সাথে শুধু শিক্ষক সুলভ আচরণ করেছেন নাকি বাবা মার মত সুলভ আচরণও করেছেন এইসব তুলে ধরবেন। তাদের কাছে অবশ্যই ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে যদি অজান্তে কোন ভুল হয়ে থাকে। এছাড়াও তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করতে হবে।

ধাপ ৪ঃ অবিভাবকদের সম্পর্কে

কোনভাবেই অবিভাবকদের ধন্যবাদ জানাতে ভূলবেন না। কারণ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তাদের সন্তান আজ এতদূর আসতে পেরেছে। তারা যে জাতির সকল সফল সন্তানদের গড়ে উঠার পিছনে এক মহানায়ক। আপনার বক্তব্যে তাদের পরিশ্রমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সুস্বাস্থ্য কামনা করতে হবে।

ধাপ ৫ঃ সহপাঠীদের সম্পর্কে

সহপাঠীদের সাথে কাটানো সমস্ত স্মৃতি সম্পর্কে বলতে হবে। তারা বিপদে কীভাবে একে অন্যের পাশে ছিল, তা তুলে ধরতে হবে। তাদের সাথে কাটানো সকল সুন্দর মুহূর্তগুলো তুলে ধরতে হবে।

ধাপ ৬ঃ অনুজদের সম্পর্কে

অবশ্যই অনুজদের ধন্যবাদ দিতে হবে, এই অনুষ্ঠান সফল করতে সহযোগিতা করার জন্য। এছাড়াও কিছু উপদেশমূলক বক্তব্য দিতে হবে তাদের উদ্দেশ্যে। সর্বশেষ দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করার উপদেশ দেয়া। বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্যতে যা করা অনুচিত যেমনঃ
  • উচ্চস্বরে বক্তব্য দেওয়া
  • বিদায়ী বক্তব্যে রাজনৈতিক বিষয় আনা
  • নির্দিষ্ট কারো প্রশংসা করে বক্তব্য দেওয়া
  • কাউকে ব্যক্তিগত আঘাত করে কোন কথা বলা
উপস্থিত সকল শিক্ষকের মধ্যে কিছু শিক্ষক বা কিছু সংখ্যক মেহমানদের প্রশংসা করা
প্রতিষ্ঠান বা কোন শিক্ষকের মন্দ দিক বলা ইত্যাদি একেবারেই অনুচিত। আমরা নিচে এসএসসি বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য উপস্থাপনা করার নিয়ম ও স্ক্রিপ্ট দিয়েছি আশা করি পুরো আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়বেন।

SSC বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রধান মেহমান,অবিভাবকবৃন্দ, বিশেষ মেহমান, উপস্থিত সকল শিক্ষক, প্রিয় সহপাঠীরা, উপস্থিত সকল অনুজদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা আর সালাম (আসসালামু আলাইকুম)।আজকের দিনটা আমাদের জন্য স্মরণীয় কারণ আমরা আজকে সবাই একত্রিত হতে পেরেছি আবার একই ভাবে আমাদের জন্য এই দিনটি কিছুটা কষ্টের। 

আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের শিক্ষক এবং মেহমানদের যারা অনেক কাজের মাঝে আমাদের জন্য সময় বের করেছেন। পাশাপাশি আমি ধন্যবাদ জানাবো যারা এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে দিন রাত কাজ করেছেন।

মন চায় না দিতে বিদায়
কিন্তু আমরা সত্যিই বড় নিরুপায়
সময় চলে যাচ্ছে সময়ের মত
মনে করে দেখো স্মৃতি আছে কত

আমরা সময়ের ব্যবধানে সামনে এগিয়ে যায়। কিন্তু রেখে যায় হাজারো স্মৃতি। এই সময় এসে আমাদের মনে পড়ে গেলো বিদ্যালয়ে কাটানো সেই হাজারো স্মৃতির কথা। যা আমাদের বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে এই বিদ্যালয় শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না, এটা একটি পরিবার।  আমরা এই প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি নাই। 

আমরা বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলাম এ যুক্ত থাকতাম। যেমনঃ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, মানবিক কাজের আয়োজন সহ আরও অন্যান্য কার্যক্রমের আয়োজন ইত্যাদি। এছাড়াও আমাদের শিখানো হতো সমাজ পরিবর্তনে আমাদের ভূমিকা।

প্রিয় শিক্ষকমণ্ডলী, আপনারা আমাদের ছাত্র ছাত্রী হিসেবে না নিজের সন্তানের মত করে শিক্ষাদান করেছেন। আপনাদের ভালবাসা ও স্নেহ দিয়ে আমাদের যেভাবে আগলে রেখেছেন সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাদের শুধু পুথিগত শিক্ষায় দেন নাই, দিয়েছেন আমাদের বাস্তবমুখী শিক্ষা। 

আপনাদের মত এমন শিক্ষকই পারে আমাদের পুরো সমাজ বা দেশকে পরিবর্তন করে দিতে। নিজেদের অজান্তে আপনাদের অবাধ্য হয়ে থাকলে কিংবা আপনাদের কষ্ট দিয়ে থাকলে আমাদের ক্ষমা করে দিবেন।

প্রিয় অভিভাবক বৃন্দ, শিক্ষকদের পাশাপাশি আপনারা হচ্ছেন সুন্দর জাতি গঠনের অন্যতম মাধ্যম। আপনাদের অবদান অতুলনীয়। ছাত্র ছাত্রীদের সাফল্যের পিছনে আপনাদের রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। তাই সবাই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রিয় সহপাঠী বন্ধুগণ, তোমাদের সাথে কাটানো সময় গুলো ছিল আমার জীবনের সেরা সময়। আমরা হয়ত কোন একদিন আবার মিলিত হব কোন এক সময়, আমাদের জমানো সেই স্মৃতি গুলা নিয়ে আবার আড্ডা/গল্প করবো। 

আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় তোমাদের সাথেই কাটানো। অনেক বিপদ আর খারাপ সময়ে একে অন্যের পাশে যেভাবে ছিলা তা সত্যি ভুলার মত না। প্রিয় অনুজ, তোমরা আমাদের এই অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করার জন্য অনেক সহযোগিতা করছো। আমরা ছোট ভাই বোনের মত তোমাদের দেখি, তোমরা আমাদের অনেক স্নেহের। 

তোমাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথাঃ তোমারা পিতামাতা এবং শিক্ষকদের অবাধ্য হবেনা। শিক্ষকদের সাথে কোনরুপ খারাপ ব্যবহার করবেনা, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলার চেষ্টা করবা। মনে রাখবা গুরুজনদের সাথে বেয়াদবি করে কেউ কোনদিন উঁচু স্থানে উঠতে পারে নাই। আর অবশ্যই বড়দের সম্মান করবা এবং ছোটদের স্নেহ করবা।

সর্বশেষ বলতে চায়, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। যাতে আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারি। সবার নিকট এই দোয়া কামনা করে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করলাম। আসসালামু আলাইকুম।
Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post