বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে? কিভাবে এর মাধ্যমে আয় করা যায়

 

বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে? কিভাবে এর মাধ্যমে আয় করা যায়

বিটকয়েন কিঃবর্তমান দিনে বিটকয়েন (Bitcoin) কারেন্সি এর সাথে পরিচিত নেই এমন মানুষ হয়তো কম আছে। কেননা আগে সীমিত পরিসরে বিটকয়েনের লেনদেন করা হলেও বর্তমানে Bitcoin এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।


তবে ২০২১ এর শেষের দিকে এসেও যারা Bitcoin এর বিষয়ে কিছুই জানেন না, তাদের জন্যেই এই আর্টিকেলটা।

এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা Bitcoin কি, কিভাবে Bitcoin কাজ করে, কিভাবে বিটকয়েন থেকে ইনকাম করা যায়  সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। তাই Bitcoin এর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।


বিটকয়েন কি? (What Is Bitcoin?)


বিটকয়েন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টোকারেন্সি এর প্রথম পরীক্ষণ মূলক মুদ্রা ছিল এটি। সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে স্বাধীন আর্থিক লেনদেন এর জন্যেই মূলত Bitcoin এর আবিষ্কার করা হয়। তারমানে কি বুঝলেন? Bitcoin এর কোনো মালিক নেই। আমরা সবাই এটিকে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে অর্জন করে থাকি।


বিষয়টা বুঝেও না বুঝার মত লাগছে তাইনা? ঠিক আছে চলুন আরো একটু সহজ ভাবে এই বিষয়টাকে জানা যাক।


আমাদের বাংলাদেশী মুদ্রার নাম হচ্ছে টাকা, ভারতের হচ্ছে রুপি। প্রত্যেকটি দেশের তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যাবস্থা রয়েছে যার নাম এবং মূল্য ভিন্ন ভিন্ন হয়। ঠিক তেমনই এক প্রকারের মুদ্রা হচ্ছে বিটকয়েন। তবে এই মুদ্রা কোনো দেশ বা এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত হয়না। কারণ আগেই জেনেছেন এই কারেন্সির কোনো মালিক নেই।


এছাড়াও আমরা চাইলে বিটকয়েন সরাসরি দেখতে কিংবা ছুঁতে পারবো না। কেননা এটা এক প্রকার ভার্চুয়াল মুদ্রা। আর ভার্চুয়াল মানে আমরা সবাই জানি যেটি এক প্রকার অবাস্তব। এই কারেন্সির সব ধরনের লেনদেন করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে।


Bitcoin যদিও এক ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা, কিন্তু এর ডিমান্ড রয়েছে প্রচুর। বর্তমানে ১ বিটকয়েন সমান বাংলাদেশি কত টাকা এটা শুনলে আপনি হতভম্ব হয়ে পড়বেন।


গুগলের তথ্য অনুসারে আজকের দিনে, ১ বিটকয়েনের সমান বাংলাদেশী টাকায় ৪,২১৫,৬৪৯.৩৪ টাকা, সুতরাং বুঝে গিয়েছেন যে যার কাছে কেবল ১ Bitcoin রয়েছে সে অনেকগুলো টাকারই মালিক।


আপনি যদি আগে Bitcoin এর বিষয়ে কিছুই না জেনে থাকেন তবে আশা করছি এখন আপনি পুরো বিষয় ক্লিয়ার ভাবে জানতে পেরেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। এখন জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে এটি কাজ করে।


অন্য পোস্টঃঅনলাইনে ইনকাম করার সেরা 10 টি ওয়েবসাইট 


বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?


ইতিমধ্যেই আপনারা জেনেছেন যে এটি মূলত এক প্রকারের ভার্চুয়াল মুদ্রা। যার সব ধরনের লেনদেন এর কাজ করা হয় ইন্টারনেট কে কেন্দ্র করে।


প্রচলিত যেসব প্রক্রিয়ায় আমরা আর্থিক লেনদেন করি সেগুলোর জন্য আমাদের বিভিন্ন তথ্য বা কাগজপত্র দিতে হয়ে থাকে, কিন্তু Bitcoin এর লেনদেনের জন্য কিছুর প্রয়োজন নেই, কেবল একটি অ্যাকাউন্ট হলেই হয়। আপনি আপনার পরিচয় গোপন রেখেই লেনদেন করতে পারবেন।


Bitcoin মূলত পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক ভিত্তিক কার্যক্রম করে থাকে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে খুব সহজেই আর্থিক লেনদেন করা যায় বিটকয়েনের মাধ্যমে। এছাড়াও লেনদেনের ক্ষেত্রে দু পক্ষকে তেমন কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়না। এটি দ্রুত লেনদেনের প্রক্রিয়া।


কিভাবে বিটকয়েনের মাধ্যমে আয় করা যায়?


ইতিমধ্যে নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে, Bitcoin এর ডিমান্ড অনেক। আর তাই কোনোভাবে যদি আপনি এই ডিজিটাল কারেন্সি আয় করতে পারেন তাহলে ভালোই লাভ হবে আপনার। কিন্তু কিভাবে আয় করবেন?


নিচে আমি আপনাদের ৪ টি উপায় বলে দিচ্ছি, যেগুলোর মাধ্যমে আপনারা Bitcoin আয় করতে পারবেন।


১. শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে

আপনি চাইলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে বিটকয়েন আয় করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে অনলাইন ভিত্তিক মার্কেটে Bitcoin এর চাহিদা প্রচুর। তাই এই সুযোগকে আপনিও কাজে লাগাতে পারেন। এখন মানুষ টাকা কিংবা ডলার বাদ দিয়ে Bitcoin বিনিয়োগ করে থাকছেন।


এছাড়া বিটকয়েনের ঝুঁকি তুলনামূলক কম হওয়াতে এর চাহিদাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে যদি আপনি শেয়ার মার্কেট এর বিনিয়োগ বিষয়ক দক্ষ হন তবে আপনি এই পদ্ধতিতে Bitcoin আয় করতে পারেন। কিন্তু একদমই নতুন হয়ে থাকলে দক্ষ কারো পরামর্শ নিয়ে তারপর করবেন।


২. বিটকয়েন মাইনিং

Bitcoin এর মাধ্যমে আয় করার আরো একটি কমন উপায় হচ্ছে বিটকয়েন মাইনিং। তবে এর জন্য প্রয়োজন হয় খুবই ভালো মানের কম্পিউটার। ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার ছাড়া Bitcoin Mining এর কার্যক্রম করা সম্ভব হয়না।

অনেকে আছেন যারা Bitcoin Mining কথাটির সাথে একদমই নতুন।


বিটকয়েন মাইনিং বলতে কি বুঝায়?

সোজা কথায়, অনলাইনে যখন দুই পক্ষের মধ্যে Bitcoin Transaction এর কাজ হচ্ছে তখন সেটিকে যাচাই করার জন্য একজন তৃতীয় ব্যক্তি থাকে যাকে বলতে পারেন Miners।


একজন Bitcoin Miners এর কাজ হলো যখনই Bitcoin Transaction হবে তখনই সেটিকে যাচাই কর। যাতে করে কোনো ভুল ত্রুটি বা জালিয়াতি প্রক্রিয়া এতে জড়িত না থাকে। বিটকয়েনের মাইনার এই কাজটি করার বিনিময়ে কিছুটা বিটকয়েন কমিশন হিসেবে পেয়ে যায়। আর এভাবেই Bitcoin Miners দের আয় হয়ে থাকে।


তবে Bitcoin Mining করে আয় করতে হলে আপনার বিনিয়োগের পরিমান অনেক বেশি হতে হবে। কারণ শুরুতে যে যে মেশিন বা হার্ডওয়্যার প্রয়োজন সেগুলো ক্রয় করতে খরচ অনেক হবে। এছাড়াও বিদ্যুৎ এর বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।


৩. কেনাবেচা করে আয়

তৃতীয় উপায়টি হচ্ছে বিটকয়েন কেনা বেচা করে Bitcoin আয় করা। বিষয়টা বুঝতে কেমন অসুবিধা হচ্ছে তাইনা?

আসলে Bitcoin এর বাজার মূল্য ক্রমশ অ্যাপ ডাউন হতে থাকে। কখনো কমে যায় আবার কখনো বাড়ে। আপনি দাম কম থাকা কালীন কিছুটা Bitcoin কিনে রেখে দিলে সেটিকে উপযুক্ত সময় অর্থাৎ দাম বাড়লে সেল করতে পারবেন বেশি দামে। এভাবে আপনি Bitcoin আয় করতে পারবেন। এই উপায়টি বেশ জনপ্রিয় এবং প্রচলিত বলা যায়।


৪. পণ্য বিক্রির বিপরীতে বিটকয়েন আয়

আপনার যদি নিজস্ব পণ্য থাকে যেগুলো অনলাইনে আপনি বিক্রি করে থাকেন, তাহলে সেগুলো বিক্রির বিপরীতে আপনি Bitcoin আয় করতে পারেন।

অর্থাৎ আপনি যদি আপনার বিজনেসে Bitcoin লেনদেন স্বীকৃতি দেন তবে ক্রেতা আপনার থেকে পণ্য কিনে বিটকয়েনের মাধ্যমে আপনাকে পেমেন্ট করতে পারবে এবং আপনি তৃতীয় পদ্ধতিতে আপনার বিটকয়েন বিক্রি করে লাভ করতে পারেন। অর্থাৎ যখন মার্কেটে এই কারেন্সির দাম বেশ থাকবে তখন।


বিটকয়েন এর সুবিধা কি?


Bitcoin ব্যবহারের কিছু সুবিধা রয়েছে। নিচে সুবিধাগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

বাজারে দাম কম থাকা অবস্থায় আপনি Bitcoin কিনে সেটিকে উপযুক্ত সময়ে অনলাইনে সেল করে ভালো লাভ পেতে পারেন।


নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখার মাধ্যমে এখানে ট্রান্সজেকশন করতে পারবেন।


এই ডিজিটাল কারেন্সি দ্বারা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সহজে লেনদেন করা যায়, এছাড়াও বিভিন্ন দেশের সাথে দ্রুততার সাথে ট্রানজেকশন করতে পারবেন। লেনদেন এর ক্ষেত্রে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়না।


বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন শপিং স্টোরে Bitcoin Transaction হয়, তাই শপিং এর ক্ষেত্রে আপনি এই কারেন্সি দ্বারা লেনদেন করতে পারেন।



বিটকয়েন এর অসুবিধা কি?


সুবিধার পাশাপাশি এই ভার্চুয়াল কারেন্সির কিছু অসুবিধা আছে। যেমন;

যেহেতু এই ডিজিটাল মুদ্রা কোনো এজেন্সি বা সরকার কতৃক হয়না সেহেতু আপনি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত কোনো সমস্যার জন্য কারো কাছে থেকে সাহায্য নিতে পারবেন না।


কোনো কারণে আপনার একাউন্ট হ্যাক হলে, বা পাসওয়ার্ড কিংবা লগইন তথ্য ভুলে গেলে আপনি আর আপনার একাউন্ট রিকোভার করতে পারবেন না।


Bitcoin এর মূল্য প্রতিনিয়ত বাড়া কমার ফলে এক প্রকার ঝুঁকি এর সাথে লেগেই থাকে।


বিটকয়েন কি বাংলাদেশের বৈধ?  

বাংলাদেশে বৈধ নাকি অবৈধ নয় নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। যারা ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন নিয়ে সামনে কাজ করতে চান তাদের জানানোর জন্য বলতেছি বাংলাদেশ থেকে আপনারা বিটকয়েন বৈধভাবে লেনদেন করতে পারবেন না। অর্থাৎ বিটকয়েন ব্যবহার করা বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ। 


অন্য পোস্টঃভিডিও দেখে প্রতিদিন 500 টাকা আয় করুন 


আমাদের শেষ কথা

বন্ধুরা আজকে আমরা বিটকয়েন কি বা Bitcoin আসলে কি? কিভাবে এটি কাজ করে, কিভাবে বিটকয়েনের মাধ্যমে আয় করা যায় এই সমস্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানলাম। আশা করছি এই বিষয়ে আপনাদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পেরেছি।

এই আর্টিকেল বিষয়ে যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন/মতামত থাকে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post