চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

চিরতা কে হিন্দি ভাষায় চিরায়াতা বলা হয়ে থাকে। চিরতা হলো একটি উদ্ভিদ। এটি মুলত ভেষজ উদ্ভিদ ও এই ধরনের ঔষধ তৈরিতে ব্যাবহার হয়ে থাকে। প্রতিটি চিরতা গাছ প্রায় উচ্চতায় দেড় বা দুই মিটার হয়। চিরতা গাছ পরিপক্ব হলে এতে ফুলের আগমন ঘটলে পুরো গাছ ফুলসহ শুকিয়ে ওষধ তৈরি করা হয়।


চিরতা কোথায় পাওয়া যায়


গ্রামে ব্যাপক পরিমানে চিরতা গাছ জন্মে থাকে। গ্রামের রাস্তার পাশে ব্যাপক পরিমানে চিরতা গাছ জন্মে থাকে।  যদি আপনি শহরে থাকেন তাহলে আপনি ভেষজ উদ্ভিদের দোকানে এটি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।



চিরতা খাওয়ার উপকারিতা


চিরতা ওষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ এক মহা ওষুধ। এটি মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত চিরতার পানি পেটের গ্যাস, বদহজম, আলসার সহ নানান রোগের উপকারি একটি উদ্ভিদ। মানসিক অবসাদ, ডিপ্রেশনের মত সমস্যা সারাতে চিরতা কর্যকারি। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ যেমন যকৃত ও হৃৎপিণ্ড কে সবলকারি হিসেবে ও ব্যপক পরিচিত। 


মানুষের রক্ত কে পরিশুদ্ধ করতে চিরতা অনেক ভূমিকা রাখে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য সহ নানান রোগ ব্যাধি তাড়াতে চিরতা বহু কাল আগ থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।



চিরতা সকল মানুষের কাছে পরিচিত একটি উদ্ভিদ। আর চিরতার তিক্ততার কোনো তুলনা হয়না, বরং মানুষ  অতি তিক্ততার বর্ননা করতে গিয়ে চিরতার মত তিতা এরুপ বলে থাকে। তবে এই তিক্ততার পাশাপাশি মহান আল্লাহ এই চিরতা কে বিভিন্ন ঔষধি গুনে গুণান্বিত করেছেন যার ফলে আমরা চিরতার তিক্ততার কথা ভুলে যাই। চিরতা ইউনানি ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।  সাম্প্রতিক সময়ে ইউনানি গবেষকদের গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত তিক্ত খাবার খান তাদের রোগ কম হয়। 



চিরতা যদিও অতি তিক্ততাযুক্ত একটি উদ্ভিদ তার পরও এতে রয়েছে অনেক উপকারীতা। চিরতা উদ্ভিদ কে সারারাত কোনো গ্লাসে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে অনেক রোগের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে।  ইউনানি বিশেজ্ঞরা চিরতা কে অঙ্গ প্রতঙ্গের সবল কারি হিসেবে মানেন। এটি জৈতিবর্ধক ও জ্বরের ক্ষেত্রে উপকারি। আমরা এখন চিরতার বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।


চিরতার গুনাগুন


(১) শরির সুস্থ রাখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক দরকারী। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমরা বিভিন্ন ঔষধ গ্রহন করে থাকি। কিন্তু নিয়মিত চিরলতা খেলে শরিরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা চরম ভাবে বৃদ্ধি পায়।

(২) বিশেষজ্ঞরা দাবি করে নিয়মিত তিতা খাবার খেলে রোগ ব্যাদি কম হয়ে থাকে। আর চিরতা তিতা সাদ যুক্ত। তাই চিরতা খেলে রোগ ব্যাধি কম হবে।


(৩) ইনফ্লুয়েঞ্জা সারাতে চিরতা উদ্ভিদ এক মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। ৬ কাপ পানিতে দশ বা বারো গ্রাম চিরতা নিয়ে অর্ধেক হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ করে দিনে দুবার করে খেলে খুব সহজে ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


(৪) চিরতা পিত্তজ্বর, ঘন ঘন ভুমি হওয়া ও অন্যান রোগ সারাতে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করে। এই সমস্যাগুলো দূরিকরনে পাঁচ গ্রাম চিরতা পানিতে থেঁত করে ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে।


(৫) রক্তপিত্তের সমস্যা সমাধানে চিরতা ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।  দুই বা তিন কাপ পানিতে পাঁচ বা দশ গ্রাম চিরতা এক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তিন বা চার বার পান করতে হবে।


(৬) টাইফয়েড জ্বর অত্যান্ত মারাত্মক ও ভয়ংকর রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই টাইফয়েড থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ও প্যারাটাইফয়েড হতে পারে। এজন্য টাইফয়েড থেকে মুক্তির পর চিরতার রস খেলে আপনি প্যারাটাইফয়েড থেকে মুক্তি পেতে পারেন।


(৭) শরিরের ঝিমুনি ভাব ও অসুস্থতার ভাব কাটিয়ে উঠতে চিরতার রস এক মোহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে।


(৮) বার্ধক্য রোধ করতে অর্থাৎ আজীবন তারুণ্য ধরে রাখতে নিয়মিত চিরতার রসের পানি পান করতে পারেন। কারন এতে আপনার শরিরের রক্ত চলাচল ও রক্তে বেগ কয়েকগুন বৃদ্বি পাবে। আর তারুণ্য ধরে রাখতে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।


(৯) যেকোনো প্রকার চর্ম রোগ সারতে এই চিরতা ব্যাপক ভুমিকা পালন করে থাকে। সামান্য পরিমান চিরতার রস সরিষার তেলের সাথে একসাথে মিশিয়ে সামান্য গরম করে যেকোনো প্রকার চুলকানি কিংবা চর্মরোগে লাগালে অতি সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।


(১০) এলার্জির কারনে শরিরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে ওঠে। রাতে পাঁচ বা দশ গ্রাম চিরতা পানির সাথে মিশিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে ওঠে পান করলে আপনি খুব সহজে মুক্তি পাবেন।


(১১) মানবদেহের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গের নাম হলো লিভার। মানুষ লিভার নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা অনুভব করে। যেমন লিভারে চর্বি জমা ইত্যাদি। লিবারের সকল সমস্যা দূর করে লিভার কে পূর্নাঙ্গ সুস্থ রাখতে চিরতার রস উপকারী ও কার্যকারি।


(১২) ত্বক ছেলে বা মেয়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে যেমন ত্বকের ঘা চিরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চিরতা ত্বককে করে তোলে মসৃন ও সুন্দর।


(১৩) যদি আপনি গ্যাষ্টিক সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে চিরতার জল আপনাকে খুব সহজেই এটি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। এছাড়াও অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য মত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এটি।


(১৪) চিরতা আমাদের দেহের রক্তের ঘাটতি পুরন করে থাকে। চিরতার রস মানবদেহে রক্তের কোষ সৃষ্টি করে। মহিলাদের মালিকের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে চিরতা বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই যাদের শরিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত নেই তারা চিরতার রস খেতে পারেন।


(১৫) ডায়াবেটিস কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। তবে যে ধরনের হোক না কেন চিরতা ডায়াবেটিসের বড় ওষধ। চিরতার রস নিয়মিত খেয়ে আপনি ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।  কারন চিরতার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা পালন করে।


(১৬) অল্প বয়সে চুল পড়া ও চুল পাকা বর্তমান সময়ে একটি সাধারণ সমস্যা। আর এই সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পেতে চিরতার একটি প্যাক ব্যাবহার করতে পারেন।


চিরতার প্যাক বানানোর নিয়ম


চিরতার ডাল পাতাসহ পুরো গাছ একদিন ভিজিয়ে রাখুন। তারপর উক্ত পানি ভালো করে চেঁকে নিয়ে গোসোলের এক থেকে দুই ঘন্টা আগে মাথায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। এভাবে এক সপ্তাহ নিয়মিত দিলে আপনি চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।


(১৭) জ্বরের কারনে বমি হয়ে থাকলে আপনি চিরতা খেতে পারেন।  এছাড়াও গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি হলে আপনি চিরতা খেতে পারেন এতে বমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


(১৮) ত্বকে এলার্জি খোস পাছড়া কিংবা যেকোন প্রকার সমস্যা সমাধানে আপনি চিরতার পানি গরম করে সরিষার তেলের সাথে একসাথ করে নির্দষ্ট স্থানে লাগিয়ে দিলে আপনার ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর  হবে।


(১৯) চিরতা চূর্ন তিন গ্রাম মধুসহ কয়েকঘন্টা পরপর কয়েকদিন খেলে চরম হাঁপানি থেকে ও মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া ও এলার্জি জনিত যেকোন হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট এড়াতে এই প্যাকটি খেতে পারেন।


(২০) চিরতায় রয়েছে একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটি বার্ধক্য রোধ করে এবং এটি হৃদরোগ ও ষ্ট্রোক ঝুঁকি এড়াতে ব্যাপক কাজ করে।


এবার বুঝলেনতো সামান্য এই উদ্ভিদটি কতগুলো কঠিন সমস্যা থেকে আপনাকে কত সহজে মুখে দিতে পারে। তাই আর দেরি না করে কষ্টকরে হলেও শরির ভালো রাখতে চিরতা বা চিরতার রস খেতে থাকুন এবং প্রয়োজনে এটি সেবন করুন।


চিরতা খাওয়ার সতর্কতা


চিরতার তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।তারপরও গর্ভাবস্থায় চিরতা বা এর রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এছাড়াও একটানা পনের থেকে ত্রিশ দিন চিরতা খেয়ে থাকলে আবার পনের বা বিশ দিন বাদ দিয়ে শুরু করুন। এতে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায়।




Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post