থানকুনি পাতার উপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা


থানকুনি পাতার উপকারিতাঃভেষজ গুণ সম্পন্ন যতগুলো উদ্ভিদ রয়েছে তার মধ্যে থনকুনি পাতা অন্যতম। প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন জটিল রোগের ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আকারে ছোট এবং গোলাকৃতির হলেও এটির উপকারিতা এবং গুণাগুণ অপরিসীম।


প্রাচীনকালের নানান আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এই ভেষজ উদ্ভিদের অসংখ্য গুন বর্ণিত রয়েছে। প্রায় সর্বত্র পাওয়া গিয়ে থাকে এই উদ্ভিদটি। যদি আপনার বাড়ির আশেপাশে এই উদ্ভিদ জন্মায় তাহলে এটিকে কেটে ফেলে ভুল করবেন না।


যেখানে জটিল ধরনের রোগের চিকিৎসা করতে আমাদের ওষুধ খেতে হয় সেখানে ওষুধ এর পরিবর্তে থানকুনি পাতা খেলে মিলবে সেই রোগ থেকে মুক্তি।


আজ আমরা এই উদ্ভিদ পাতার নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কে জানবো, এটির উপকারিতা জানাটা আপনার আমার সবার জন্যই অনেক উপকারী হবে। তবে আসুন প্রথমে জানি থানকুনি কি?


থানকুনি কি/থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা


থানকুনি পাতা হচ্ছে এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ, যেটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। এটির বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে "Centella  Asiatica", এছাড়া অঞ্চল বেধে এই উদ্ভিদকে আদমনি, টেরা, থুলকুড়ি বা আদা গুনগুনী বলে ডাকা হয় থেকে। তবে থানকুনি বললেই বেশিরভাগ মানুষ এটিকে চিনে থাকেন।


ছোট এই গোলাকৃতির পাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সহ খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের কঠিন রোগ নিরাময়ে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে।


এমনকি বিশেষজ্ঞদের মতে কোনো মানুষ যদি প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে এটি খেতে পারেন তবে তার পেটের কোনো ধরনের সমস্যা হবে না এছাড়াও নানান রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাবেন তিনি।


অবশ্যই পড়ুন

হাতের পেশি মোটা করার সহজ উপায়


তাহলে আসুন জেনে নেই থানকুনির নানাবিধ গুণাগুণ সম্পর্কে।


থানকুনি পাতা খাওয়ার নানান উপকারিতাঃ


থানকুনি বা আদা গুনগুনি পাতা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে থেকে আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে আপনি সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।


১) জ্বর ও সর্দি-কাশি সমস্যা দূর করতে


ঋতু পরিবর্তনের কারণে হোক অথবা অন্যান্য কোন ভাইরাস জনিত কারণে প্রায় সময় আমরা অনেকেই জ্বর সর্দি এবং কাশি এর মতো সমস্যায় অনেক ভোগান্তিতে পড়ে থাকি। এক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় ওষুধ খেয়েও আমাদের রোগ ভালো হয়না। এক্ষেত্রে ১ চামচ শিউলি পাতার রসের সাথে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারলে জ্বরের বা সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাবেন সহজে।


২) ক্ষত স্থানে চিকিৎসায়


বিভিন্ন কারণে আমরা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে  ক্ষত হতে পারে। এ ধরনের ক্ষতগুলো আমাদের অনেক যন্ত্রণা দিয়ে থাকে। তবে ক্ষত সারানোর চিকিৎসায় থানকুনি ব্যবহার করলে দ্রুত মিলবে মুক্তি। Saponins নামের এক ধরনের উপাদান এই উদ্ভিদে থাকায়, আপনি এর পাতা থেঁতো করে আপনার ক্ষতস্থানে লাগালে অতি দ্রুত আপনার ক্ষতস্থান সেরে যাবে।


৩) ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে


উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হাই ব্লাড প্রেসার এর কারণে আমাদের শরীরের রক্তনালীগুলো দুর্বল হওয়া, রক্তনালীতে চর্বি জমতে শুরু করা সহ নানান বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়। থানকুনি উদ্ভিদে নানাবিধ গুণসম্পন্ন উপাদান থাকার ফলে এটি আমাদের উচ্চরক্তচাপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক এর ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয় থানকুনি পাতা।


৪)মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে


নিয়মিত থানকুনির রস খাওয়া শুরু করলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায় এবং আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেক প্রকার হয়। এটি খেলে আমাদের শরীরে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং Pentacyclic Triterpenes নামে এক ধরনের উপাদান বাড়তে থাকে।


যার ফলে এটি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে আগের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বাড়িয়ে দেয়। আর এজন্যই অনেক বিশেষজ্ঞরা ছোট বাচ্চাদের থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে বাচ্চার ছাড়াও যেকোনো বয়স্ক লোকেরা এটি খেলে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।


৫) ত্বক উজ্জ্বল বা ফর্সা করে


ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আমরা অনেকে অনেক ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেক টাকা পয়সা নানান ক্রিম এবং ওষুধের পিছনে আমরা ব্যয় করে থাকি। তবে সেসব বাদ দিয়ে আপনি যদি থানকুনি পাতা ভালোমতো ধুয়ে ব্লেন্ডার করে পেস্ট বানিয়ে সেটি পরিমাণমতো জলের সাথে মিশিয়ে কয়েকদিন খান তাহলে আপনার ত্বক ভিতর থেকে অনেক উজ্জ্বল হয়ে শুরু করবে।


৬)চুল পড়ে যাওয়া সমস্যা দূর করে


হেয়ার ফল বা চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় আমরা প্রায় ভুগে থাকি। যদি আপনি সহজে এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে থানকুনি/আদা গুনগুনি  দিয়ে বানানো একটি পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য প্রথমে থানকুনি পাতা ভালোমতো ধুয়ে থেঁতো করে নিন, এরপর তাতে আমলা এবং তুলসী পাতার মিশ্রণে একটি পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি আপনার চুলে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন।


৭)হজম শক্তি বাড়ায়


খাবার খাওয়ার পর সেটি হজম না হওয়া অনেক বড় একটা সমস্যা। থানকুনি তে থাকা জাদুঘরে উপাদান আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে সেটি আমাদের হজমের সমস্যাকে দূর করে।


৮) পেটের নানাবিধ সমস্যা দূর করে


আমাদের শরীরে হওয়া নানা ধরনের রোগের সূত্রপাত কিন্তু পেটের সমস্যা থেকে হয়ে থাকে। অর্থাৎ পেট যদি পরিষ্কার না থাকে কিংবা পেটে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সেটি আমাদের শরীরে অন্য কোন রোগ হিসেবে দেখা দেয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস সেবন করলে আপনার পেটের সকল সমস্যা নিমিষেই দূর হবে।


এগুলো ছাড়াও আরও নানাবিধ জটিল রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এই থানকুনি উদ্ভিদ পাতা


কিভাবে থানকুনি পাতা খাবেন?


এমনিতে এই উদ্ভিজ পাতা খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই, তবে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে থানকুনির পাতা খেয়ে থাকেন। তবে নিচে আমি কয়েকটি পদ্ধতি আপনাদের বলে দিচ্ছি।


পদ্ধতি ১-


সকালে ঘুম থেকে উঠে মাত্র খালি পেটে খেতে পারেন। প্রথমে থানকুনির পাতাগুলো পরিষ্কার জল দিয়ে ভালোমতো ধুয়ে নিন। এরপর সেগুলোকে চিবিয়ে খেয়ে নিন। এছাড়া পাতাগুলো ধুয়ে সেগুলোকে বেটে রসগুলো আলাদা করে নিয়ে সে রসগুলো পান করতে পারেন। নিয়মিত এভাবে খেতে পারলে ভীষণ উপকার পাবেন।


পদ্ধতি ২-


অনেকে থানকুনি ভর্তা হিসেবে তৈরি করে ভাতের সাথে খেয়ে থাকেন। তাই আপনিও এটিকে সকালের এবং রাতের খাবারের তালিকায় যুক্ত করতে পারেন।


পদ্ধতি ৩-


সকালে ঘুম থেকে উঠে থানকুনির রসের সাথে পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এটি আপনার পেটের সাথে সাথে রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।


পদ্ধতি ৪-


কাঁচা দুধের সাথে থানকুনি মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার গেস্ট্রিক এর সমস্যা অনেকটা নির্মূল হবে।


পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া


নিশ্চই অনেকে ভাবছেন যদি থানকুনি পাতার এত উপকারিতা থাকে তাহলে আবার পার্শপ্রতিক্রিয়া কেন থাকবে।


বিষয়টা আসলে এমন না, এমনিতে এর কোনো খারাপ দিক নয়। তবে এটা নিশ্চই আমরা সবাই জানি যে কোনো কিছুই বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।


আর এইজন্যই যদি পরিমাণের বেশি দিনে আপনি অনেকবার এটি খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার কিছু ক্ষতি হতে পারে। যেমন;


যাদের এলার্জি আছে তাদের চুলকানি অথবা এলার্জির সমস্যার রিয়াকশন হতে পারে।


পেটের মধ্যে বেদনা বা যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে।


মাথা ঘোরানো মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।


অসময়ে রক্তচাপ হটাৎ করে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।


তবে আপনি যদি নিয়ম মেনে খান অর্থাৎ দিনে ১-২ চামচ বা অল্প একটু খান তাহলে আপনি কোনো ক্ষতি হবে না।


আমাদের শেষ কথা


বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম থানকুনি পাতা খাওয়ার নানাবিধ উপকারিতা এর বিষয়ে। পরিশেষে আপনাদের বলতে চায় সুস্থ্য থাকার পাশাপাশি রোগ মুক্ত থাকতে চাইলে এই গুণসম্পন্ন উদ্ভিদের পাতা অবশ্যই খাবেন।


তবে অনেকে বিশ্বাস করেন না এই পাতার উপকারিতা সম্পর্কে, তাদের উদ্দেশে বলবো আপনি নিজে আগে খেয়ে দেখুন তারপর নিজেই লক্ষ করবেন আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি কতটা হচ্ছে।


শেষ করছি এইটুকুতেই, আর্টিকেলটা কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ


Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post