থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়ম। জ্বর মাপার থার্মোমিটার এর দাম কত

থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়ম। জ্বর মাপার থার্মোমিটার এর দাম কত


থার্মোমিটার কি এবং থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত গাইডলাইন থাকবে আজকের নিবন্ধে। আপনার বাড়িতে যদি থাকে একটি থার্মোমিটার, যেটির সাহায্যে আপনি আপনার শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তবে আপনার এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবশ্যই অবগত হওয়া উচিত। আর তাই থার্মোমিটার কেনার নিয়ম থেকে শুরু করে এটির সঠিক ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে এই পর্বে। 



থার্মোমিটার কি?



থার্মোমিটার হচ্ছে এক ধরনের যন্ত্র বা ডিভাইস যেটির মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের তাপমাত্রার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারি। অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের একটি যন্ত্র এটি। থার্মোমিটার অনেক ধরনের হয়ে থাকে যেমন; তরল থার্মোমিটার, গ্যাস থার্মোমিটার, রোধ থার্মোমিটার, তাপযুগল বা থার্মকাপল থার্মোমিটার, বিকিরণ থার্মোমিটার ইত্যাদি। তবে বাজারে কিছু সাধারণ থার্মোমিটার পাওয়া যায় যেগুলোর মাধ্যমে আমরা তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারি সহজে। এসব থার্মোমিটারের নাম পারদ থার্মোমিটার। বিভিন্ন ক্লিনিক এবং হাসপাতালে এই পারদ থার্মোমিটারের সাহায্যে জ্বর মাপা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই পারদ থার্মোমিটার অনেক পুরনো হওয়ায়, এটির প্রচলন বেশি। অধিকন্তু এই ধরনের থার্মোমিটার দামেও বেশ সহজলভ্য হয়ে থাকে।



তবে এখন এই থার্মোমিটারের ব্যাবহার আগের তুলনায় অনেকটাই কমে আসছে। কারণ, ইদানিং বাজারে কিছু ডিজিটাল থার্মোমিটার পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে সরাসরি শরীরের তাপমাত্রা কত সেটি লেখা থাকবে। অর্থাৎ ডিজিটাল থার্মোমিটারে আপনার শরীরের তাপমাত্রা ১০২° হলে সেটিই লেখা থাকবে। এতে করে সহজেই আপনি আপনার তাপমাত্রা দেখে নিতে পারবেন। 



থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়ম



অনেকেই ভেবে থাকেন থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন নেই। যদি আপনিও এই ভাবনা ভেবে থাকেন তবে বলতে হয় আপনি ভুল করছেন। থার্মোমিটার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম না জেনে জ্বর মাপলে সেটি ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না। বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে যেগুলো আপনাকে থার্মোমিটার ব্যবহারের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। নিচে সাধারণ থার্মোমিটার ব্যবহারের কিছু নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে নির্দেশিকা দেওয়া হলো। আজ থেকে থার্মোমিটার ব্যবহারের সময় উক্ত নির্দেশিকাগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।



থার্মোমিটার ব্যবহারের পূর্বে আপনার অবশ্যই জেনে নিতে হবে যে, কত তাপমাত্রা হলে সেটিকে জ্বর হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের শরীরে তাপমাত্রা ৯৮-৯৯ ডিগ্রি এর মধ্যে থাকে। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা যদি এর বেশি হয় তবে ধরে নেওয়া হবে জ্বর হয়েছে। তবে অনেকেই তাপমাত্রা ১০০ এর নিচে থাকলে সেটিকে স্বাভাবিক বলে ধরে থাকে, যেটির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। 



বয়সভেদে থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়ম ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের জন্য ডাক্তাররা মুখের ভিতরে থার্মোমিটার প্রবেশ করিয়ে জ্বর মাপার নির্দেশিকা প্রদান করে থাকে। যদিও এটি একটি বিব্রতকর পদ্ধতি। পাঁচ বছর বয়সের পর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত বগলের মাঝখানে থার্মোমিটার বসিয়ে জ্বর মাপা হয়ে থাকে। নিচে এবার কয়েকটি ধাপে থার্মোমিটার ব্যবহারের পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।



১. শুরুতেই আপনার থার্মোমিটারটি ভালোমতো ঝাকিয়ে নিন। এটিকে ততক্ষণ পর্যন্ত ঝাকিয়ে নিন যতক্ষণ না পর্যন্ত তাপমাত্রা ৯৬.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে আসছে। 



২. অতঃপর যদি আপনার বয়স পাঁচ বছরের বেশি হয়ে থাকে তবে থার্মোমিটারটি বগলের মাঝখানে বসিয়ে দিন। কিন্তু যদি আপনি আপনার শিশুর তাপমাত্রা মাপতে চান তবে প্রথমে থার্মোমিটার কি ভালোমতো ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন, প্রয়োজনে সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর সেটি তার জিহ্বার ভেতরে বসিয়ে দিন। 



৩. থার্মোমিটার বসিয়ে দেওয়ার পর অন্তত ২-৩ মিনিট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন তাপমাত্রার সঠিক ফলাফল আসার জন্য। 



৪. ২-৩ মিনিট অপেক্ষার পর এবার আপনি আপনার থার্মোমিটারটি হাতে নিয়ে নিন, যদি আপনার থার্মোমিটার পারদ হয়ে থাকে তবে একটু সরু রেখা দ্বারা আপনার শরীরের তাপমাত্রা নির্দেশ করা হবে। কিন্তু যদি আপনার থার্মোমিটার ডিজিটাল হয়ে থাকে তবে আপনি সরাসরি আপনার শরীরের তাপমাত্রা কত সেটি দেখতে পারবেন। 



৫. আপনার শরীরে তাপমাত্রা পরিমাপের পর অবশ্যই থার্মোমিটারটিকে ভালোমতো ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে এরপর সেটিকে থার্মোমিটারের বাক্সে কিংবা খোলসে ঢুকিয়ে রাখুন। যাতে কোনোভাবেই থার্মোমিটারে কোন জীবাণু কিংবা ধুলাবালি না পৌঁছাতে পারে। 



উপরে উল্লেখিত পাঁচটি ধাপে বলা হয়েছে আপনি কিভাবে সঠিকভাবে থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারেন সে ব্যাপারে। আপনি যদি উপরের ধাপ গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে জ্বর মাপেন তবে সঠিক ফলাফল পাওয়ার সাথে সাথে, জীবাণু সংক্রমনের কোন আশঙ্কা থাকবে না। 



অন্য পোস্ট: কাটা জায়গা তাড়াতাড়ি শুকানোর উপায়

থার্মোমিটারে বাচ্চাদের জ্বর মাপার নিয়ম



উপরে আপনারা থার্মোমিটার ব্যবহারের পদ্ধতি বা নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। কিন্তু আপনি যদি আপনার শিশুর তাপমাত্রা সঠিকভাবে থার্মোমিটার দ্বারা মাপতে চান, তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে থার্মোমিটার ব্যাবহার করতে হবে আপনাকে। থার্মোমিটারে বাচ্চাদের জ্বর মাপার সম্পূর্ণ নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো। উল্লেখিত নিয়ম বা নির্দেশিকা গুলো মেনে থার্মোমিটার ব্যবহার করা হলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। 



১. শুরুতে আপনাকে আপনার থার্মোমিটারটি ঠান্ডা জল দিয়ে খুব ভালো মতো ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে প্রস্তুত করে নিতে হবে।



২. দ্বিতীয় ধাপে থার্মোমিটারটি আপনার শিশুর মুখের ভিতরে বসিয়ে দিতে হবে। 



৩. এবার অন্তত দুই থেকে তিন মিনিট সময় পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। 



৪. কিছু সময় অপেক্ষা করার পর এবার আপনি থার্মোমিটারটি নিন, এবং আপনার শিশু তাপমাত্রাটি পর্যবেক্ষণ করুন। 



৫. থার্মোমিটার ব্যবহারে মাধ্যমে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করার পর সেটিকে পুনরায় পরিষ্কার করে যত্ন করে তুলে রাখুন। 



ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়ম



এতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা জানলেন সাধারন থার্মোমিটার দ্বারা কিভাবে আপনি আপনার এবং আপনার শিশুর জ্বর মাপতে পারেন সেটি। তবে সাধারণ পারদ থার্মোমিটার এবং ডিজিটাল থার্মোমিটারের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এছাড়াও দুটির ব্যবহারবিধির মধ্যেও কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আর তাই যদি আপনি একজন ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে নিচে দেওয়া নির্দেশিকাগুলো অনুসরণ করে আপনার এবং আপনার শিশুর জ্বর মাপুন। 



১. বরাবরের মতোই প্রথমে আপনার ডিজিটাল থার্মোমিটারটির মাথা সুন্দর মত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোনোভাবেই সেটি অপরিষ্কার না থাকে। এরপর সেটিকে অন করুন।



২. এবার কাঙ্খিত স্থানে থার্মোমিটারটি সুন্দর মত বসিয়ে দিন। যদি আপনার শিশুর তাপমাত্রা মাপতে চান তবে সেটি তার মুখে এবং যদি আপনি নিজের তাপমাত্রা মাপতে চান তবে বগলের মাঝখানে রেখে দিন। 



৩. এখানে আপনার ঘড়ির সময় ধরে বসে থাকতে হবে না। নির্ধারিত সময় পর থার্মোমিটারটি অটোমেটিক বিপ করতে শুরু করবে।



৪. থার্মোমিটার কি বিট বা কোন আওয়াজ করার পর সেটি সরিয়ে নিন এবং তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন।



৫. তাপমাত্রা পরিমাপ শেষে যথারীতি সেটি পরিষ্কার করে অফ করে রাখুন। 



অন্য পোস্ট: হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায় 

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন



থার্মোমিটার সম্পর্কে সচরাচর কিছু জিজ্ঞাসিত তো প্রশ্ন থাকে আপনাদের মনে। নিচে সেসবের উত্তর প্রদান করা হলো। 



জ্বর মাপার থার্মোমিটার এর দাম কত?



আপনি যদি বাজারের সাধারণ পারদ থার্মোমিটার ক্রয় করতে চান তবে সেটির মূল্য ৮০-১০০ টাকার মধ্যেই হবে। 



ডিজিটাল থার্মোমিটার দাম কত?



ডিজিটাল থার্মোমিটারগুলোর দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। মূলত থার্মোমিটার কোয়ালিটির উপরে নির্ভর করে দাম হয়। উন্নতমানের থার্মোমিটার কিনতে গেলে ১০০০-১২০০ টাকাও দাম হতে পারে। তবে কমদামের মধ্যে ডিজিটাল থার্মোমিটার কিনতে চাইলে পাওয়া কবে ২০০-৫০০ টাকার মধ্যে।



থার্মোমিটার কত সময় রাখতে হবে?



অনেকেই একটি কমন প্রশ্ন করে থাকেন যে, কত সময় পর্যন্ত থার্মোমিটার রাখতে হবে। যদিও এটির কোন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা নেই। তবে সাধারণত ২-৩ মিনিট পর্যন্ত রাখলেই আপনি সঠিক ফলাফল পেয়ে যাবে। এর বেশি রাখার কোন বাধ্যবাধকতা নেই ।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post