ওমান ভিসা পাওয়ার উপায় | ওমান যেতে কি কি প্রয়োজন

ওমান খুবই সুন্দর একটি দেশ। বাংলাদেশীদের জন্য ওমানে কাজ করার দারুন সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ওমান সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায়শই কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
ওমান
ওমান

বর্তমানে ওমান যেতে কি কি প্রয়োজন, ওমান কাজের বেতন কত, ওমান ভিসা পাওয়ার জন্য কি কি করা লাগবে এই নিয়েই আজকের পোস্টটিতে আলোচনা করা হবে। তাই যাদের এই বিষয়ে জানার আগ্রহ রয়েছে তারা অবশ্যই পোস্টটি বিস্তারিত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ওমান ভিসা পাওয়ার উপায়?

ওমান থেকে অনেক ধরনের ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। ওমান যাওয়ার জন্য ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী খরচের পরিমাণটাও কম বেশি হয়ে থাকে। ওমান যাওয়ার জন্য জনপ্রিয় ভিসা গুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
  • ওমান ফ্রি ভিসা
  • ওমান টুরিস্ট ভিসা
  • ওমান ড্রাইভিং ভিসা বা দোকান ভিসা
উপরে যে তিন ধরনের ভিসার উল্লেখ করা হয়েছে এগুলোর সুযোগ সুবিধা ও ভিন্নতর। নিচে এই তিন ধরনের ভিসা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করার চেষ্টা করা হলোঃ

ওমান ফ্রি ভিসা

ওমানের ফ্রি ভিসাটি হচ্ছে ওমানের কোন কোম্পানির বা যেকোন প্রতিষ্ঠানের একটি লাইসেন্সের উপর নির্ভর করে থাকে। ওমানের মালিকানা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাধারণত ওমান ফ্রি ভিসা স্পন্সর করা হয়ে থাকে। এই কাজগুলো সম্পূর্ণ হয়ে থাকে এজেন্টের মাধ্যমে। 

এই সকল এজেন্টরা যে লোকটিকে কাজ করার জন্য ওমানে নিয়ে যায় তারা কোম্পানিতে কাজ করবে নাকি বাইরে কাজ করবে। যদি বাইরে কাজ করার অনুমতি দিয়ে থাকে তাহলে ফ্রি ভিসার মাধ্যমে সে যে কোন কোম্পানিতে কাজ করতে পারবে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী।

ওমান টুরিস্ট ভিসা

ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ওমানে গেলে অবশ্যই ওমান টুরিস্ট ভিসা নিতে হবে। ওমান ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে কিছুদিন সেখানে ভ্রমণ করে আবার চলে আসতে হয়। ওমান ট্যুরিস্ট ভিসা বাংলাদেশের যেকোন এজেন্সি থেকে খুব সহজেই করে নেওয়া যাবে। বাংলাদেশে বায়োসেল নিবন্ধিত এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে আবেদন করলে ঝুঁকিটা অনেক কম থাকে।

ওমান ড্রাইভিং ভিসা

বাংলাদেশ থেকে অনেকে ওমান ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে কাজ করতে যাই।ওমানের ড্রাইভিং ভিসায় গেলে অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ভালো বেতনে কাজ পাওয়া যায়। ওমান ড্রাইভিং ভিসা করতে হলে বাংলাদেশ সরকার লাইসেন্সকৃত যে কোন এজেন্সি থেকে ওমান ড্রাইভিং ভিসা করে নিতে হবে।

ওমান ভিসার দাম কত। ওমান যেতে কত টাকা লাগে

ওমান ভিসার দাম কত বা ওমানের কোন ভিসার জন্য বর্তমানে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে এই নিয়ে অবশ্যই জানাটা গুরুত্বপূর্ণ।ওমান যাওয়ার জন্য যেহেতু অনেক ধরনের ভিসা পাওয়া যায় তাই ভিসার ধরন ভেদে খরচের পরিমাণটাও কম বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। নিচে ওমান কোন ক্যাটাগরির ভিসার জন্য কত টাকা খরচ হয় এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হলোঃ

ওমান ট্যুরিস্ট ভিসার দাম কত | ওমান ট্যুরিস্ট ভিসা খরচ

ওমান ট্যুরিস্ট ভিসায় যাওয়ার মাধ্যমে আপনার কত টাকা খরচ হবে এটা সম্পূর্ণ আপনার ওপর নির্ভর করবে। কেননা ওমানে গিয়ে আপনি কতদিন ভ্রমণ করবেন ও কতদিন থাকবেন এটা সম্পূর্ণ আপনার বিষয়। বর্তমানে এখন একজন নাগরিকের ৮০ হাজার টাকার মতো ওমান টুরিস্ট ভিসার জন্য খরচ হচ্ছে।ভিসা প্রসেসিং করার জন্যই এই ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে ৫০ হাজার টাকার মতো।

ওমান ফ্রি ভিসার দাম কত | ওমান ফ্রি ভিসা খরচ

বর্তমান সময়ে ওমানে যাওয়ার জন্য খরচটা কিছুটা বেড়েছে। কিছুদিন আগেও ওমানে ফ্রি ভিসা নিয়ে যাওয়ার জন্য খরচ করতে হতো দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা সেখানে এখন মোট খরচ হচ্ছে চার লক্ষ টাকার মত। 

কারো কারো ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্সকৃত যে কোন এজেন্সি থেকে ওমান ফ্রি ভিসা করা যাবে এবং ওমানে যাওয়া যাবে।

ওমান ড্রাইভিং ভিসার দাম কত?

ওমান ড্রাইভিং ভিসার দাম কত বা বর্তমানে ওমান ড্রাইভিং ভিসা পাওয়ার জন্য কত টাকা সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে জানা আছে কি? যারা ড্রাইভিং শিখেছেন তারা চাইলে প্রমাণ ড্রাইভিং ভিসা করতে পারেন এবং ওমানের ড্রাইভিং ভিসার মাধ্যমে যেতে পারেন।

বাংলাদেশের এজেন্সির মাধ্যমে যদি ওমানের ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে যেতে হয় তাহলে সব মিলিয়ে ওমান যাওয়া পর্যন্ত খরচ আসতে পারে ৫ লক্ষ টাকার মতো। অর্থাৎ ৫ লক্ষ টাকা যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে পাসপোর্ট খরচ সহ যাবতীয় সকল খরচ এরমধ্যে হয়ে যাবে।

ওমান যেতে কি কি প্রয়োজন?

ওমান যেতে হলে আমাদের অবশ্যই বেশ কিছু নিয়ম মেনে তারপরে যেতে হবে। অর্থাৎ ওমান যাওয়ার জন্য আমাদের মূল্যবান কিছু ডকুমেন্ট লাগবে যেগুলোর মাধ্যমে ওমান ভিসার জন্য আবেদন ও  সেখানে যাওয়া যাবেঃ
  • একটি ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকতে হবে এবং পাসপোর্ট এর মেয়াদ অবশ্যই ৬ মাসের বেশি থাকতে হবে।
  • এনআইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
  • আবেদনকারী ব্যক্তির বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
  • নির্দিষ্ট একটি কাজের ওপর দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে ও বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি দিতে হবে।
  • পাসপোর্টের ফটোকপি সাথে রাখতে হবে।
  • চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
  • ওমান ভিসার ফটোকপি লাগবে।
ওমান যাওয়ার জন্য অবশ্যই এই কাগজপত্র গুলোর প্রয়োজন হবে। এই কাগজপত্রের যদি কোন ধরনের ভুল থাকে তাহলে ওমান ভিসাটি বাতিল হয়ে যেতে পারে তাই অবশ্যই সবকিছু ভালোভাবে চেক করে তারপর জমা দিতে হবে।

ওমানে কোন কাজের চাহিদা বেশি?

ওমানে এখন কনস্ট্রাকশনের কাজ ও ফ্যাক্টরি কাজের উপর ব্যাপক লোক লাগছে। অর্থাৎ এইসব কাজের উপর যারা দক্ষ রয়েছেন তাদের চাহিদা ওমানে প্রচুর পরিমাণে। এসব কাজ শিখে যারা ওপারে কাজ করছেন তারা অনেক বেশি টাকা বেতন পাচ্ছেন এবং অনেক ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। 

তাই ওমান যাওয়ার আগে অবশ্যই কনস্ট্রাকশনের কাজটা ভালোভাবে আয়ত্ত করে তারপর যাওয়া উচিত তাহলে সেখানে গিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব।

ওমানে কোন কাজের বেতন কত?

ওমানে বর্তমানে বাংলাদেশীরা অনেক ধরনের কাজ করে থাকেন। বাংলাদেশিরা ওমানে যে ধরনের কাজ করে থাকেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের লিস্ট নিচে দেওয়া হলোঃ
  • মেকানিক্যাল
  • ইলেকট্রনিক
  • মসজিদ ক্লিনিং
  • গ্যারেজ ম্যান
  • সিকিউরিটি গার্ড
  • টাইলস ক্লিনার
  • গবাদি পশু পালন
এই সকল কাজগুলো যারা ওমানে গিয়ে করে থাকেন তাদের বেতন সাধারণত ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক কাজ যারা করেন তাদের বেতন একটু বেশি হয়ে থাকে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী।

ওমান ড্রাইভিং ভিসা বেতন কত?

ওভারের সব থেকে বেশি সুযোগ সুবিধা যাদেরকে দেওয়া হয় তারা হচ্ছে ড্রাইভার।ড্রাইভারদের অসংখ্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি তাদের বেতন খুবই বেশি হয়ে থাকে ওমানে। একজন ড্রাইভার যদি মালিকের মন জয় করতে পারেন এবং বিশ্বস্ততার সাথে দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারেন।

তাহলে অনায়াসেই ওমানে গিয়ে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মাসে অনায়াসে ড্রাইভিং ভিসার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। তাই যারা ড্রাইভিং করতে পারেন তারা ওমানে গিয়ে এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন।

ওমান যেতে বয়স কত লাগে?

ওমানে যদি কেউ কাজের ভিসা নিয়ে যেতে চাই তাহলে তার সর্বনিম্ন বয়স ২২ বছর হতে হবে। তবে যাদের বয়স ১৮ বছরের উপরে তারাও চাইলে ওমান যেতে পারবে তবে তারা স্টুডেন্ট ভিসা অথবা টুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করে পারবেন। 

তবে এই ভিসা দুটি ব্যবহার করে ওমানে দীর্ঘ মেয়াদে থাকতে পারবেন না। আপনারা হয়তো এই দুটি ভিসা ব্যবহার করে ওমানে যেতে পারবেন কিন্তু সেখানে কাজ করতে হবে অবৈধভাবে।তাই যদি কাজের ভিসা নিয়ে ওমান যেতে হয় তাহলে অবশ্যই বয়স ২২ বছর হওয়া লাগবে।

বাংলাদেশ থেকে ওমান যেতে কত সময় লাগে?

বাংলাদেশ থেকে ওমান যাওয়ার জন্য কত সময় ব্যয় হয় এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। যদি কেউ ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সের ননস্টপ ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে ওমান যাওয়ার জন্য সময় লাগে সাত ঘন্টার মতো। 

কেউ যদি স্টপ ফ্লাইট করে বাংলাদেশ থেকে ওমান যেতে চান তাহলে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে অথবা এর বেশিও লাগতে পারে।

বাংলাদেশ টু ওমান এয়ার টিকেট প্রাইস?

বাংলাদেশ থেকে ওমান যেতে কত টাকা প্লেন ভাড়া নিয়ে থাকে অবশ্যই ওমান যাওয়ার আগে জেনে নিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ওমান যাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন বিমান ভাড়া হলো ৪৯ হাজার ৬৭০ টাকার মতো।

বাংলাদেশ থেকে ওমানে বেশকিছু ফ্লাইট পরিচালিত হয়ে থাকে আপনারা চাইলে এই সকল ফ্লাইটগুলোর মধ্যে থেকে যেকোনো একটিতে করে সরাসরি ওমানে যেতে পারেন। যেহেতু ভাড়ার পরিমাণ মাঝেমধ্যেই পরিবর্তিত হয়ে থাকে তাই এই বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।

ওমান ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?

ওমানের ১ রিয়াল সমান বাংলাদেশের কত টাকা বা ওমানের টাকা সমান বাংলাদেশের কত টাকা এখন দেওয়া হচ্ছে অবশ্যই সেটাও জানতে হবে। বর্তমানে এক ওমানি রিয়াল সমান বাংলাদেশী ২৭৩.৯৯ টাকার মতো।ওমানের ১০০ রিয়ালে সমান ২৭৩১৮ বাংলাদেশী টাকা। ওমানের ১০০০ রিয়াল সমান বাংলাদেশি ২৭৩১৮৭ টাকা।

আমাদের শেষ কথা

বাংলাদেশীদের জন্য সকল সময়ই ওমান কাজের জন্য দারুন একটি দেশ। সৌদি আরব, মালয়েশিয়ার পর ওমানেও দারুন সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই যদি ওমান যেতে চান তাহলে যেকোনো কাজের বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে তারপরে ওমান ভিসার জন্য আবেদন করা যেতে পারে।

পোস্টটি পড়ে কোন বিষয়ে সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকলে বা এই বিষয়ে আর কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post