প্রেসার মাপার নিয়ম: বর্তমান সময়ে একটি নীরব ঘাতক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত সমস্যা "উচ্চ রক্তচাপ"। যা মানুষের মৃত্যু বয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর এর জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজন সচেতনতা। কেননা আপনি যদি এ ব্যাপারে সচেতন হয়ে থাকেন তাহলে খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হবেন।
আপনি নিশ্চয়ই জানবেন – যে বা যারা দীর্ঘদিন যাবত উচ্চ রক্তচাপ অর্থাৎ হাই প্রেসারে ভুগছেন তাদের নিয়মিত রক্তচাপ মাপাটা অনেক বেশি জরুরী। প্রেসার যেমন হাই হলে শরীরের জন্য তা ক্ষতিকর, ঠিক একইভাবে একজন মানুষ লো-প্রেশারের কারণেও অসুস্থ অনুভব করেন। সঠিকভাবে প্রেসার মাপার বিষয়টা সবারই আয়ত্ত করা জরুরী।
তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা প্রেসার মাপার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ তাহলে আসুন কথা না বাড়িয়ে ছোট্ট এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেই প্রেসার মাপার নিয়ম সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু বিষয়াবলী।
প্রেসার মাপার নিয়ম
আপনি যদি সঠিকভাবে প্রেসার মাপতে চান তাহলে প্রথমত আপনাকে প্রস্তুত হয়ে নিতে হবে। যেমন ধরুন: প্রেসার মাপার একঘন্টা আগে কোন কায়িক শ্রম, ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা যাবে না। চা, কফি এ জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং প্রেসার মাপার ঠিক ১০ মিনিট আগে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে।
এছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখাটা খুবই জরুরী। কেননা আপনি যদি এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনার প্রেসার মাপেন তাহলে আপনি সঠিক মাত্রা জানতে পারবেন। মানে আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে, নাকি অস্বাভাবিক আছে, এটা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে আপনার সামনে।
তাহলে আসুন পর্যায়ক্রমে জেনে নেই প্রেশার মাপার নিয়ম, প্রেসার মাপার যন্ত্র এবং সেইসব যন্ত্রের দাম ও ব্যবহারের নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে।
প্রেসার মাপার যন্ত্রের নাম কি
আমরা অনেকেই জানিনা কোন যন্ত্রের সাহায্যে প্রেসার মাপতে হয় অর্থাৎ প্রেসার মাপার যন্ত্রের নাম কি? আসলে রক্তচাপ/প্রেসার মাপার যন্ত্রের নাম হলো: স্ফিগমোম্যানোমিটার। আর Sphygmomanometer শব্দটি মূলত দুটি ভিন্ন শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। গ্রীক Sphygmos = Pulse এবং বৈজ্ঞানিক পরিভাষা Manometer = চাপ পরিমাপক যন্ত্র। এই যন্ত্রে মূলত একটি প্রসারণক্ষম হস্তবন্ধনী (Cuff) এবং একটি ম্যানোমিটার থাকে। আর যন্ত্রের সেই কাফে সংশ্লিষ্ট ধমনীর প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্থ করে আর ম্যানোমিটার রক্তচাপ পরিমাপ করে। কাফের চাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট চাপে রক্তপ্রবাহ পুনরায় শুরু হয় এবং একসময় পুরোপুরি বাঁধাহীন হয়। যে চাপে রক্তপ্রবাহ শুরু হয় তাকে সিস্টোলিক চাপ আর যে চাপে রক্তপ্রবাহ সম্পূর্ণ বাঁধামুক্ত হয় তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে।
অনেকেই জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন, এই যন্ত্রটির আবিষ্কারক কে? কোথাকার কোন মানুষটিই তৈরি করেছেন প্রেসার মাপার এই যন্ত্রটি? এ সম্পর্কে জানা যায় যে– স্যামুয়েল সিগফ্রিড কার্ল রিটার ভন বাস্ক নামক একজন অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক ১৮৮১ সালে দুর্দান্ত এই প্রেসার মাপার যন্ত্র আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে অধিকতর সহজ করে ব্যবহার উপযোগী করেন ইটালিয়ান শিশু চিকিৎসক রিভা রকি। তবে হ্যাঁ, ১৯০১ সালে এই যন্ত্রের আধুনিকায়ন করে মেডিকেল কমিউনিটিতে জনপ্রিয় করেন Cushing Syndrome এর আবিষ্কারক হার্ভে উইলিয়াম কুশিং।
প্রেসার মাপার যন্ত্র কত ধরনের?
সাধারণত ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র দুই ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো: ম্যানুয়াল ব্লাড প্রেসার মেশিন অপরটি হলো: ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন। আবার ম্যানুয়াল এবং ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিনের মধ্যেও আরো বেশ কিছু কোয়ালিটির মেশিন রয়েছে। তবে প্রকার ভেদের দিক থেকে প্রেশার মাপার যন্ত্র মাত্র দুই ধরনের।
অন্য পোস্টঃবায়োডাটা লেখার নিয়ম
ম্যানুয়াল প্রেশার মাপার যন্ত্রের দাম কত
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি ব্লাড প্রেসার মূলত দুই ধরনের মেশিনের সাহায্যে নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এখন কথা হচ্ছে, ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার ও ম্যানুয়াল ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্রের দাম মোটামুটি কত টাকা?
আপনি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন এটি একটা ব্যয়বহুল যন্ত্র। কেননা ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিন মূলত ক্রয় করা হয়ে থাকে চিকিৎসা করার উদ্দেশ্যে। তাই ব্যক্তিগত কারণে মানুষ এই যন্ত্রটা সচরাচর কিনে থাকেন না। তবুও যে কারণেই কেনা হয়ে থাকুক না কেন, অনেকের মনেই ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্রের দাম জানার আগ্রহ প্রকাশ পায়।
তাই আপনি যদি একটা প্রেসার মাপার যন্ত্র কিনতে চান সেক্ষেত্রে আপনার মোটামুটি খরচ পড়বে ২,৯০০.০০ টাকা। এক্ষেত্রে মেনোমিটার হবে:২০-৩০০mmHg, এয়ার সিস্টেম হবে- Velcro Cuff Latex Bag, ওয়েট হবে ৪৩০ গ্রাম এবং accuaracy হবে: +৩mmHg.
এনালগ প্রেসার মাপার মেশিনের দাম কত
আপনি যদি এনালগ প্রেসার মাপার মেশিন কিনতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল প্রেসার মাপার যন্ত্রের ডান থেকে অনেকটাই কম হবে। সে ক্ষেত্রে এনালগ প্রেসার মাপার মেশিনের প্রাইজ দিয়ে দাঁড়াবে ১,১৫০ টাকা। আর আপনি চাইলে এর থেকে বেশি দামেও কিনতে পারবেন। কেননা অধিক দামেরও এনালগ প্রেসার মাপার মেশিন রয়েছে।
ডিজিটাল প্রেসার মাপার মেশিন দাম
অপরদিকে আপনি যদি ডিজিটাল প্রেসার মাপার মেশিন কিনতে চান সে ক্ষেত্রে প্রাইস পড়বে ১,৫৪৯ টাকা। এর অধিক দামেও আপনি ডিজিটাল প্রেসার মাপার মেশিন কিনতে পারবেন। পরবর্তীতে আমরা প্রেসার মাপার মেশিনের বিভিন্ন দাম পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করবো যেগুলো আপনি বাংলাদেশ থেকেই কিনতে পারবেন। এমনকি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করতে পারবেন।
প্রেসার মাপার মেশিনের দাম কত
ইতিমধ্যে আমরা তিন ধরনের মেশিনের দাম জেনেছি এ পর্যায়ে প্রেসার মাপার মেশিনের মডেল ও বাংলাদেশের তা কত দামে বিক্রি করা হয় সে সম্পর্কে জানব। তাই সময় নষ্ট না করে নিচের দেওয়া চারটি এক নজরে পড়ে ফেলুন।
ব্লাড প্রেসার মাপার নিয়ম
আপনি যদি সঠিক নিয়মে ব্লাড প্রেসার মাপতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই ধীরস্থির মাথায় সবকিছু স্টেপ বাই স্টেপ অনুসরণ করতে হবে। মনে রাখবেন, প্রেসার মাপার পূর্ববর্তী সময়ে কোন প্রকার ভারী কাজ করা চলবে না। এক কথায় আপনি এমন কোন কাজ করবেন না যেটা আপনাকে অস্থির করে তুলবে এবং আপনি শারীরিকভাবে খুবই ব্যতিব্যস্ত থাকবেন।
মূলত প্রেসার মাপার আগে আপনাকে ধীরস্থির হতে হবে। দশ মিনিটের মত বিশ্রাম নিতে হবে এবং তার এক ঘণ্টা আগে কোন প্রকারের শক্ত কাজকর্ম করা চলবে না। সেই সাথে মানসিক চাপ থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে। কেননা মানসিক চাপ বা কোন শারীরিক ক্রিয়া-কলাপ রক্তচাপের পরিমাপকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
এবার আসুন পর্যায়ক্রমে জেনে নেই ব্লাড প্রেসার মাপার সঠিক নিয়ম।
প্রথমত: রক্তচাপ মাপার যন্ত্রটি কাফের নিজের প্রান্ত কনুইয়ের সামনের ভাঁজের 2.5 সেন্টিমিটার এর ওপরে ভালোভাবে আটকাতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ কনুইয়ের সামনে হাত দিয়ে ব্র্যাকিয়াল ধমনীর অবস্থান স্থির করতে হবে।
তৃতীয়ত: ধমনীর অবস্থান স্থির করার পরবর্তীতে তার ওপর স্টেথোস্কোপের ডায়াফ্রাম বসাতে হবে। এ সময় ডায়াফ্রাম এমনভাবে চাপ দেওয়া উচিত যেন ডায়াফ্রাম ও ত্বকের মাঝখানে কোন ফাঁকা অংশ না থাকে।
অবশ্যই তখন অতিরিক্ত টাইট হাতা জামা পরবেন না। মনে রাখবেন, যখন চাপ মারবেন তখন কাফের ওপরে স্টেথোস্কোপ রাখা যাবে না।
চতুর্থত: এ পর্যায়ে রক্তচাপ মান যন্ত্রের ঘড়ি হৃদপিন্ডের একই তলে অবস্থান করবে। পরবর্তীতে রেডিয়াল ধমনী অনুভব করানো হয় আর ধীরে ধীরে চাপ মান যন্ত্রের চাপ বাড়ানো হয়।
পঞ্চমত: রেডিয়াল পার্স বন্ধ হওয়ার পর ৩০ মিলিমিটার ওপরে নেওয়া হয় পরবর্তীতে চাপ আবারো ধীরে ধীরে কমানো হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই সময় সাধারণত দুই মিলিমিটার চাপ কমানো হয়ে থাকে প্রতিবিটে। কেননা খুব দ্রুত চাপ কমালে ভুল ফলাফল পাওয়ার আশঙ্কা থেকে থাকে।
ষষ্ঠমত: চাপ কমানোর সময় স্টেথোস্কোপ দিয়ে ব্র্যাকিয়াল ধমনীতে সৃষ্ট হওয়ার শব্দ কান লাগিয়ে শুনতে হবে. কেননা চাপ কমতে শুরু করলে তখন রক্ত চলাচলের ফলে এক ধরনের শব্দের সৃষ্টি হয়। আপনি হয়তো জেনে থাকবেন সেই শব্দকে করটকফ শব্দ বলা হয়।
প্রথমত তীক্ষ্ণ ধরনের শব্দের সৃষ্টি হয় তখন। জানলে আশ্চর্য হবেন এই শব্দের ধরন অনুসারে পাঁচটি পর্যায়ে রয়েছে। মূলত তীক্ষ্ণ শব্দের সৃষ্টি হয় সিস্টোলিক রক্তচাপ নির্দেশ করার উদ্দেশ্যে। অপরদিকে যে চাপে শব্দ বন্ধ হয়ে যায় সেটাকে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বলা হয়।
তাই সঠিকভাবে প্রেসার মাপতে চাইলে অবশ্যই আমাদের দেওয়া এই নিয়মগুলো ধাপে ধাপে অনুকরণ করুন। আশা করা যায় আপনি খুব সহজেই নির্ভুল ভাবে প্রেশার মাপা শিখে যাবেন।
অন্য পোস্টঃশোক বার্তা লেখার নিয়ম
প্রেশার মাপার সফটওয়্যার
অনেকেই হয়তো জানবেন আজকাল মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ও নিজের প্রেসার মেপে ফেলা সম্ভব হয়। আবার এমন অনেকেই রয়েছেন যারা কিছুটা হলেও অবাক হবেন। বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের সবকিছুই সম্ভব তাহলে এটা কেনই বা হবে না বলুন? হ্যাঁ প্রকৃত সত্যি হচ্ছে বর্তমানে প্রেসার মাপার জন্য বেশ কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার রয়েছে। যে সফটওয়্যার গুলো আপনি মোবাইলে ইন্সটল করে খুব সহজেই আপনার প্রেসার মেপে ফেলতে পারেন। এ পর্যায়ে আমরা প্রেশার মাপার বেশ কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার এর নাম সাজেস্ট করব। সেগুলো হলো:
Blood Pressure Companion
Heart Habit
Pacer
My Diet Coach
Sleep Cycle
Calm
Smoke Free
Breathing Zone
HealthWatch 360
তাই আপনি চাইলে যেকোনো সময় যে কোন মুহূর্তে এই অ্যাপসগুলো মোবাইলে ইন্সটল করে ঘরে বসেই সঠিক পদ্ধতিতে নিজের প্রেসার মেপে ফেলতে পারবেন।
পরিশেষে: তো সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ এই ছিল আমাদের আজকের সঠিক নিয়মে ব্লাড প্রেসার মাপার আলোচনা পর্ব। অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে। আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।